No Result
View All Result
অভিমত
  • প্রচ্ছদ
  • মন্তব্য
  • বিতর্ক
  • সাক্ষাৎকার
  • বিশ্লেষণ
  • কলাম
  • পরিক্রমা
  • রিভিউ
অভিমত
  • প্রচ্ছদ
  • মন্তব্য
  • বিতর্ক
  • সাক্ষাৎকার
  • বিশ্লেষণ
  • কলাম
  • পরিক্রমা
  • রিভিউ
No Result
View All Result
অভিমত
No Result
View All Result
প্রচ্ছদ নির্বাচিত

কোনো আশা নেই পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে

টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত চার্লি ক্যাম্পবেলের প্রতিবেদন, অনুবাদ : কাঞ্চন নাথান

১২ অক্টোবর ২০২৩
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির, ছবি : টাইম ম্যাগাজিন, সরকার প্রতীক

কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির, ছবি : টাইম ম্যাগাজিন, সরকার প্রতীক

বন্ধু মুহিবুল্লাহর একটি ছবি টাঙ্গানো মোহাম্মদ জুবায়েরের ঘরের দেয়ালে। দুই বছর আগে মুহিবুল্লাহকে বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে হত্যা করা হয়, কারণ তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্য করতেন। এর আগে ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তিনি হোয়াইট হাউসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করেন। সেই বছরই মুহিবুল্লাহ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪০তম অধিবেশনে বক্তৃতা রাখেন। বক্তৃতায় তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা কীভাবে দশকের পর দশক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সে চিত্র তুলে ধরেন।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য মুহিবুল্লাহ ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। ২০১৭ সালে প্রায় ৭, ৪০,০০০ রোহিঙ্গা বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা ‘জাতিগত নির্মূল’ বলে অভিহিত করেছে।
মুহিবুল্লাহর ঐক্যের আহ্বান ক্যাম্পের প্রভাবশালী সন্ত্রাসী দলগুলোর (আরসা ও আরএসও) জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভয় পুঁজি করে সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, চোরাচালানের মতো অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজকাল ক্যাম্পে শরনার্থীদের কল্যাণার্থে কোনো ধরনের সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে কুতুপালং বস্তির যে ছয়জন কর্মী মার্কিন গণমাধ্যম টাইম ম্যাগাজিনের সাথে কথা বলেছেন, তাদের প্রত্যেককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

জুবায়ের এখন মুহিবুল্লাহর আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান। টাইম ম্যাগাজিনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার সুরক্ষার জন্য এখানে দশজন মানুষ রাতে থাকে। আমি প্রায় ১০০ বার হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। তবে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত অথবা আমাকে হত্যা না করা পর্যন্ত, আমি এই কার্যক্রম চালিয়ে যাব।”

জুবায়ের জানেন তাদের ভাগ্যে কী আছে। নাফ নদী পেরিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ছয় বছর হলো। যে সহিংসতা থেকে পালিয়ে তারা এপারে এসেছে, তার ফলাফল আনুমানিক প্রায় ২৪০০০ হাজার মানুষের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও যৌন নির্যাতনের গল্প ছাড়া আর কিছু নিয়ে আসেনি। তারা না মিয়ানমারের নাগরিক; না বাংলাদেশে নাগরিক। সোজা কথায়, তাদের কোনো রাষ্ট্রীয় পরিচয় নেই।

আজ কুতুপালং বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির। এতে সান ফ্রান্সিসকোর চেয়েও বেশি মানুষ থাকে। দিনের বেলায় ক্যাম্পের বিপজ্জনক দিকগুলো কারো চোখে পড়ে না। বরং, শোনা যাবে নার্সারির বাচ্চদের পড়ার শব্দ। আর অন্যপ্রান্তে দেখা যাবে একদল শিশু-কিশোর একটা জীর্ণ ফুটবল নিয়ে খেলছে, শ্রমিকরা রাস্তার পাশে ফুলের বাগানের যত্ন নিচ্ছে। আর কিছু নেকাব-বোরখা পরা নারী সমুচা ও টক বরই বিক্রি করছে।

সন্ধ্যা নামলেই কুতুপালং ক্যাম্পের পরিবেশ পাল্টে যায়। নৈশপ্রহরী অদৃশ্য হয়ে যায়। আর তখন অপরাধীরা সুসংরক্ষিত পথে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। প্রায় প্রতিরাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংস্থাগুলির মতে, কেবল ২০২২ সালে ৪০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়। তবে এ বছরের প্রথমার্ধেই শরণার্থী নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪৮ জন।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) উভয়ই কুতুপালং ক্যাম্পের দুটি অপরাধী চক্র বা দল। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে মূলত তারা প্রতিনিয়ত সহিংসতায় লিপ্ত থাকে।

ক্যাম্পে এই ধরনের ধারাবাহিক সহিংসতা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে বড় কোনো বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিষয়টি আসন্ন জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারের জন্য একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়। এর কারণ আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কোভিড মহামারী ও ইউরোপে যুদ্ধের প্রত্যাবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগে এখন অনেকটাই রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে সরে গেছে। এদিকে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন তাদের দেশে ফিরে যায় । টাইম ম্যাগাজিনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য একটি বোঝা। তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।”

কিন্তু বিষয়টা এতো সহজ নয়। রোহিঙ্গা জনগণকে যখন মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল তখন আপাতদৃষ্টিতে দেশটি গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে এখন এটি জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর নিয়ন্ত্রণে, যার তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের গুম, হত্যা, জাতিগতভাবে নির্মূল করার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই জেনারেল একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে সামরিক সরকারের নেতৃত্ব নেন। সেইসাথে গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সু চি কে কারাবন্ধি করেন ৷ ৫৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটি এখন গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ সংঘাতে লিপ্ত ।

মিয়ানমার জনসংখ্যার প্রায় ৯০% বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে। রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়ার কারণে মিয়ানমারের অনেকেই তাদেরকে অপছন্দ করেন এবং বহিরাগত হিসেবে দেখে। জনসংখ্যার প্রায় ৪% হওয়া সত্ত্বেও, রোহিঙ্গারা আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর একটি হিসাবেও স্বীকৃত নয়। তবে কুতুপালং-এ বসবাসকারী প্রায় সকল রোহিঙ্গাই দাবি করে যে, তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে মেয়াদোত্তীর্ণ আইডি কার্ড, জমির দলিল, পুরানো ছবি ও অন্যান্য নথিপত্র দেখাতে পারবে।
এ আর এমন কি! মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বহু বছর ধরে রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে দেশটিকে শাসন করছে। বৌদ্ধ-আধিপত্যবাদী মতাদর্শ ও জাতিবিদ্বেষী মনোভাব রোহিঙ্গাদের ‘বহিরাগত’ হিসেবে কোণঠাসা করে রেখেছে। আর সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা দেখতে দক্ষিণ এশীয়দের মতো এবং কথা বলে চট্টগ্রামের উপভাষায়। তাদের অনেকেরই মিয়ানমারে শেকড় রয়েছে এক শতাব্দী আগে থেকেই, তবুও মিয়ানমারের দাবি রোহিঙ্গারা ব্রিটিশ ভারতের শ্রম অভিবাসনের শিকার।
২০১৭ সালের সহিংসতা শুধু একটি উদাহরণ ছিল। এর আগে ২০১২, ২০০০, ১৯৯১ ও ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা সামরিক নির্যাতন ও দমনের সম্মুখীন হয়েছে।
এনিমি উইদিন : বুদ্ধিস্ট ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ আ মুসলিম ‘আদার’ গ্রন্থের লেখক ফ্রান্সিস ওয়েডের বলেন, “মিয়ানমার সরকার ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের ‘বহিরাগত’ ও ‘রাষ্ট্রীয় হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। আর দেশটির ইতিহাসও সেভাবেই রচিত।”
তাছাড়া ১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্ব আইন পাশ করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ‘বহিরাগত বাঙালি’ তকমা দেয়। এই আইন তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, সন্তান ধারণ ও শিক্ষা লাভের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে নিরাপত্তা পাওয়ার আশায় মিয়ানমার ছেড়েছে। মিয়ানমারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারা শরিফ হোসেনের ছেলেও পাচারকারীদের সহায়তায় ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়। কুতুপালং-এ বসবাসকারী ৫৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, তার ছেলে এখন পেনাং-এ সোলার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

রোহিঙ্গারা যখন কুতুপালংয়ে ভিড় করতে থাকে, তখন অনেক আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তারা ইটের রাস্তা, ল্যাট্রিন, ক্লিনিক সহ খাবার বিতরণের জায়গা স্থাপন করার মাধ্যমে এলাকাটিতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের গেটপোস্টে এখন একটি নয় সংখ্যার আইডি নম্বর রয়েছে। আবার অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। বড় বড় বিলবোর্ডে অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ও কানাডার মানবিক অবদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এদিকে দাতা সংস্থার কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কক্সবাজারে প্রতিনিয়ত নতুন হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের আর্থিক সহায়তা কেবল পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসছে। আমাদের এখন ভাবতে কীভাবে নতুন নতুন দাতাগোষ্ঠীকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যায়।”
বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ ও আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসায় নতুন সংকটের সূত্রপাত হয়েছে। এর ফলে ক্যাম্পের আর্থিক সহায়তা কমে আসছে। এই বছর প্রয়োজনীয় ৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের অর্ধেকেরও কম অর্থায়ন পেয়েছে রোহিঙ্গারা। তাছাড়া অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়া সহ মাঝে মাঝে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পে। বর্ষাকালে প্রায় পাহার ধসের ঘটনা ঘটে। পানির সরবরাহ কম হওয়ার কারণে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বললেই চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ক্যাম্পগুলোতে আনুমানিক ৪০ শতাংশ মানুষ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত।

ডা. মাহমুদুল হক প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পে কাজ করছেন। ক্যাম্পের বর্তমান খারাপ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক এনজিও স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে তহবিল কমে যাওয়ায় কারণে। আর যে হারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাড়ছে, সে হারে আসবাবপত্র সরবরাহ ও পরিষেবার মান বাড়ছে না”।
গত জুন মাস থেকে তহবিল ঘাটতির কারণে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তাদের খাদ্য ভাউচারের পরিমাণ কমিয়ে জনপ্রতি প্রতিমাসে ৮ মার্কিন ডলারে (আনুমানিক ৮৬০ টাকা) নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। যা খাবার-প্রতি মাত্র ৯ সেন্ট (আনুমানিক ১০ টাকা) । ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর প্রধান অরুণ জেগান বলেন, “আমরা অনেক রোগীকে শুধু ভাত, লবণ ও জল খেয়ে বেঁচে থাকতে দেখছি। এতে তাদের মনের মধ্যে হতাশা বাসা বাঁধছে। তাছাড়া ক্যাম্পের বিশৃখল পরিবেশ এই পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কোভিড মহামারী ছিল অনেকটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বাংলাদেশ সরকার তাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ, বৈধভাবে কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ততা ও স্থায়ী বাসস্থান স্হাপন করা থেকে বিরত রেখেছে, যাতে তারা এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যওয়ার চিন্তা না করে। ২০২০ সালের আগে ক্যাম্পের বাসিন্দারা সহজেই অস্থায়ী কাজ খুঁজে পেত। এতে তারা তাদের বাড়তি চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারতো।
কিন্তু কঠোর লকডাউন তাদের কাঁটাতারে বন্দি করে রাখে। এতে তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। সেই সুযোগে অপরাধী গোষ্ঠীগুলো তাদের কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে মাদকসহ চোরাচালান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে তাদের দিয়ে সীমান্তের ওপারে “ইয়াবা” পাচার করতো । প্রবীণ রোহিঙ্গা সলিম উল্লাহ বিলাপ করে বলেন, “কয়েকজন ব্যক্তি মাদক সম্পর্কিত কার্যকলাপে জড়িত থাকলেও এটি আমাদের পুরো সম্প্রদায়ের সুনাম নষ্ট করছে।

অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও কুতুপালংয়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর শিবিরে আনুমানিক ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও জাতিসংঘের মিয়ানমার মানবাধিকার পরিস্থিতির বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুস জোর দিয়ে বলেন, “এই শিশুরা যে তাদের বিকাশের সময়টাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না, তা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়। কেবলমাত্র অপর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গারা আজ দুর্দশা ও অবিচারের শিকার হচ্ছে।”

ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ হ্রাস ও শিক্ষা কার্যক্রমে সীমিত সুযোগের কারণে, তরুণরা হয় অপরাধী দলে যোগদান করে নতুবা ক্যাম্প থেকে পালানোর জন্য তীব্র মানসিক চাপ অনুভব করে। এই পরিস্থিতিতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দালাল চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৯টি নৌকায় করে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। দুঃখজনকভাবে তাদের মধ্যে অন্তত ৩৪৮ জন এই যাত্রায় প্রাণ হারিয়েছে বা নিখোঁজ হয়েছে। সমুদ্রে বিপদের বাইরেও তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। ২৩ বছর বয়সী নুর ছোট নৌকায় করে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু মিয়ানমার পুলিশ তাকে বাধা দেয়। পরে তাকে মিয়ানমারের কায়া রাজ্যে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নুরের বড় ভাই আনোয়ার শাহ রোহিঙ্গা শিবিরের একজন শিক্ষক। তার মতে, পরিস্থিতির অবনতি আরো অনেক তরুণকে ভবিষ্যতে একই ধরনের যাত্রা শুরু করতে বাধ্য করবে। শাহ জোর দিয়ে বলেন, “শিক্ষার সুযোগ না থাকলে কেউই তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে না। আর এতে গভীর হতাশা দানা বাঁধতে শুরু করে।”

বাংলাদেশও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কঠোর করছে। শুরুর দিকে দেশটির সামরিক বাহিনী শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্বে ছিল। এতে সেখানকার শৃঙ্খলা সুসংগঠিত ছিল বলে জানায় ক্যাম্পের শরণার্থীরা । পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে, এই দায়িত্ব বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ এই সংগঠন তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নারীকর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নারীদের হয়রানি, শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের সাথে জড়িত। এটা সত্যিই অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।”

শরণার্থী শিবিরে নারীদের সবচেয়ে বেশি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল হওয়ার কারণে বয়ঃসন্ধিকাল পার করা রোহিঙ্গা মেয়েরা সামাজিক মেলামেশা করতে পারে না। কিশোর ছেলেদের রাস্তায় খেলা ও ঝগড়া করতে দেখা যায়। তার বিপরীতে মেয়েদের খুব কমই দেখা যায়। মাঝে মাঝে তারা আশ্রয়স্থলের পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দেয়। অরুণ জেগান বলেন, “এই পরিবেশে নারীরা সম্পূর্ণ অদৃশ্য। আমি প্রায়ই এমন নারীদের মুখোমুখি হই যারা বছরের পর বছর ধরে তাদের হাউজিং ব্লকের বাইরে যায়নি।

একে তো হয়রানির ভয়, আবার নারী শিক্ষকেরও অভাব। ফলে খুব কম অভিভাবকই তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক। পরিবারগুলোর আয়ের কোনো উৎস নেই। ক্ষুধা ও অভাবের মুখে বাল্যবিবাহ ও গর্ভধারণের প্রবণতা তাই বেড়েই চলছে। যারা যৌতুক দিতে পারছে না, তারা তাদের মেয়েদের পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এই আশা আঁকড়ে ধরে যে তাদের মেয়েরা বিদেশে ভালো থাকবে ।
রোহিঙ্গা নারীকর্মীরা আক্ষেপ করে বলেন, “অতীতে এনজিওগুলো মেয়েদের জন্য স্কুল ও টেইলরিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই কার্যক্রমগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বাড়ার কারণে নারীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।”

খুব কম সংখ্যক রোহিঙ্গা নারী কিংবা পুরুষ মিয়ানমারে তাদের আগের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে, তবুও তাদের ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল। তবে কীভাবে ও কোথায় তারা ফিরবে সে ব্যপারে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে।

২০১২ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সাথে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে চিহ্নিত কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক মিয়ানমারের গোপন শিবিরে আটকে রাখা হয়। কুতুপালং-এ দিনকে দিন তাদের জীবন যাপন বেশ কঠিন হয়ে পড়লেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত কোনো শিবিরে ফিরতে নারাজ । তারা তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার দাবিতে অটল। ৬১ বছর বয়সী উদ্বাস্তু দরবেশ আলী এই অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “আমাদেরকে মিয়ানমারের শিবিরে ফেরত পাঠানোর চেয়ে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখানে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাওয়া।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ এক বিতর্কিত প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রায় ২৫,০০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নামে পরিচিত একটি দুর্গম পলি দ্বীপে স্থানান্তর করেছে। বঙ্গোপসাগরে দ্বীপটি জেগে উঠেছে মাত্র গত দেড় দশকে, সেখানে এক লাখ শরণার্থীর জন্য বিরাট স্থাপনা গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত কোনো মানব বসতিই ছিল না। সেখানে ১৩,০০০ একর ভূমি সহ অবকাঠামো যেমন বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, কৃষি প্লট, সাইক্লোন শেল্টার, হাসপাতাল, মসজিদ ও স্কুল নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়নে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে দাবি করে বাংলাদেশ সরকার। এদিকে দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা দূরে অবস্থিত এবং শুধু ভালো আবহাওয়ায় প্রবেশ করা যায়। রোহিঙ্গারা এটিকে বন্দিত্বের আরেকটি রূপ হিসেবে দেখছে। মায়ানমারের মংডু জেলার শাবাজার গ্রামের ৫৩ বছর বয়সী কামাল হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এখানকার পানি খুবই বিপজ্জনক। তাছাড়া দ্বীপে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং জরুরি পরিষেবার অভাব রয়েছে। এটি মোটেও নিরাপদ জায়গা নয়।”

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিতে চীন মধ্যস্থতা করে। পরে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম প্রচেষ্টায় ২০৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। তবে এই চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কেউ জানতেন না। সম্প্রতি এপ্রিল মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন আলোচনায় বেইজিং আবারও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বর্তমানে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এখানে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহায়তাকারী সংস্থাগুলোও রোহিঙ্গাদের জন্য যে ধরনের কাজ করে যাচ্ছে তা মিয়ানমারেও প্রসারিত করতে পারে।”

চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। তাছাড়া এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুর মুসলমানকে নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের ইতিহাসের কারণে, রোহিঙ্গারা চীনকে একটি বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মনে করে না। এর আগে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কটের বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশে ক্রমাগত বাধা দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী রফিক আলম বলেন, “চীন সরকারের লক্ষ্য মিন অং হ্লাইংকে রক্ষা করা কারণ তারা মিয়ানমারে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।”

এর আগে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হয়নি। ২০১৭ সালে সু চির নেতৃত্বাধীন আধা-গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেই রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো এই সহিংসতাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে দাবি করে জাতিসংঘ। তবে সু চির দল জাতিসংঘের এই দাবি নাকচ করে দেয়। তিনিও সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন। সেই সময় সু চি প্রশাসনের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উইন মায়াট আয় মন্তব্য করেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের গ্রামে নিজেরাই আগুন লাগিয়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, “যে গ্রামে সন্ত্রাসীরা (রোহিঙ্গারা) ঢুকতে পারে না, সেখানে কোনো জ্বালাও-পোড়াও হয় না। সন্ত্রাসীরা (রোহিঙ্গারা) ঢুকলেই পুড়ে যায়।”

পরে এই উইন মায়াট-ই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ন্যায়বিচার দিতে না পারার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন। তিনি এখন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (ছায়া সরকার) মানবিক মন্ত্রী। গত মাসে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এসব ভাবলে আমার দুঃখ হয়। আমরা সেই সময়ে ন্যায়বিচার দিতে না পারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে তখন কেন আমরা তা করতে পারিনি তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।”

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে একটি বিবৃতি জারি করেছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা ছায়া সরকার। গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত হলে তাদের সেদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থাও করা হবে বলে এই বিবৃতিতে বলা হয়। এদিকে গত জুলাই মাসে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টে উপ-মানবাধিকার মন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছেন অং কিয়াও মো। তিনি একজন রোহিঙ্গা। টাইম ম্যাগাজিনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমরা সবাই একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়ছি, যাতে এটি একেবারে শেষ হয়।”

সামরিক ও আধা-গণতান্ত্রিক উভয় শাসনের অধীনে বছরের পর বছর ধরে নিপীড়ন রোহিঙ্গাদের মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টে সাম্প্রতিক সময়ের সহানুভূতি প্রদর্শন সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি নাকি কেবল আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের একটি কৌশল- তা নিয়েও প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে তাদের মনে। রোহিঙ্গা শিবিরের যুব সমিতির নির্বাহী পরিচালক খিন মং বলেন, “অং কিয়াও মো রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাছাড়া তিনি আমাদের দ্বারা নির্বাচিত হননি।”

২০১৫ সালের নির্বাচনে বৌদ্ধ চরমপন্থীদের সমর্থন পাওয়ার প্রয়াসে, সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনীত করেনি । পরে ২০২০ সালে বাতিল হওয়া নির্বাচনে শুধু দুজনকে প্রার্থী করেছিল। এর ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উভয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বাদ পড়ে । ৬৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী নর অ্যালং মিয়ানমারের একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “সু চির ছায়া সরকারের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাছাড়া তারা বৈধ সরকার হিসেবেও স্বীকৃত না।”

কেবল সামরিক জান্তার পরাজয় এবং সেই সাথে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হলেই দেশটির প্রতি হয়তো আস্থা ফিরবে রোহিঙ্গাদের । তবে এটা এখন আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। না মিয়ানমারে, না বাংলাদেশে- কোথাও রোহিঙ্গাদের ঠাঁই নাই। তাদের জীবন্ত সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নাই হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা তরুণ প্রজন্ম এখন আর ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গি পরেনা। দাতব্য সংস্থার দেওয়া টি-শার্ট ও প্যান্টই তাদের একমাত্র ভরসা। মশলাদার মাছ আর শাকসবজি খাওয়ার কোনো সুযোগ নাই রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্পের ডাল ও আলুই তাদের বাঁচিয়ে রাখে। জুবায়ের (প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর বন্ধু) উদ্বেগের সাথে বলেন, “আমার নিজের সন্তানরাও এখন বাংলাদেশীদের মতো কথা বলে। আরো ১০ বছর এখানে থাকলে আমরা তো আমাদের সংস্কৃতিই সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাব।”

রাগে ও দুঃখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন জুবায়ের। তার প্রয়াত বন্ধু মুহিবুল্লাহর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। পরে আমাদের বলেন, তিনি প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে তার ভাগ্য মহিবুল্লাহর মতোই জনগণের সাথে বাঁধা। মিয়ানমারে চলমান সহিংসতাকে জ্বলন্ত মৃত্যুপুরীর সাথে তুলনা করে বলেন, “আমরা এখানেও আর থাকতে চাই না। তবে নাগরিক হিসেবে আমাদের পূর্ণ অধিকার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমরাও আপনার মতোই মানুষ।”

টাইম ম্যাগাজিন, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চার্লি ক্যাম্পবেল টাইম ম্যাগাজিনের সিঙ্গাপুর ব্যুরোতে কাজ করেন। তিনি এশিয়ার ব্যবসা, প্রযুক্তি ও ভূ-রাজনীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন। আগে তিনি চীনে টাইমের ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম গড়ে তুলতে এগিয়ে আসুন।

বিষয়: অং সান সু চিআরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)ইউএনএইচসিআরকক্সবাজারকাঞ্চন নাথানকুতুপালংচীনজাতিসংঘটাইম ম্যাগাজিনবাংলাদেশভাসানচরমাদকমানবপাচারমিন অং হ্লাইংমিয়ানমারমুহিবুল্লাহমোহাম্মদ জুবায়েররোহিঙ্গারোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)শরণার্থীশেখ হাসিনা
ShareTweetPinSend

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

কলাম

রাষ্ট্র কী চায়

৩ জুলাই ২০২৪
Glimpses of the new Parliament Building, in New Delhi
নির্বাচিত

যে নির্বাচনে জিতেও হার মোদীর, হেরেও জয় ‘ইন্ডিয়া’র

৮ জুন ২০২৪
নির্বাচিত

জ্বরের নাম হীরামণ্ডি : তাওয়াইফ বনাম বেগমদের অবাক রূপকথা

৫ জুন ২০২৪
নির্বাচিত

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পিছিয়ে পড়ছে কেন?

৩০ এপ্রিল ২০২৪
নির্বাচিত

নাগরিক সমাজ কোথায় হারালো?

১৬ এপ্রিল ২০২৪
বিএনপির একটি কর্মসূচি, ছবি : বিএনপির ফেসবুক পেজ
নির্বাচিত

বিএনপি কি ব্যর্থ হলো?

২২ জানুয়ারি ২০২৪

Discussion about this post

জনপ্রিয় লেখা

বিএনপির একটি কর্মসূচি, ছবি : বিএনপির ফেসবুক পেজ

বিএনপি কি ঠিক পথে আগাচ্ছে?

১০ অক্টোবর ২০২৩
২৯ অক্টোবরের হরতালে মতিঝিলের শাপলা চত্বর

হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে কি দাবি আদায় হবে?

১০ নভেম্বর ২০২৩
Glimpses of the new Parliament Building, in New Delhi

যে নির্বাচনে জিতেও হার মোদীর, হেরেও জয় ‘ইন্ডিয়া’র

৮ জুন ২০২৪
ইসরাইলের আয়রন ডোম এন্টি-মিসাইল সিস্টেমে ধরা পড়া রকেট হামলার দৃশ্য, ছবি : এএফপি

হামাসের আকস্মিক হামলার নেপথ্যে

৮ অক্টোবর ২০২৩

কম দামে আলু রপ্তানি, বেশি দামে আমদানি

১১ নভেম্বর ২০২৩
  • প্রচ্ছদ
  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
google play

অভিমত
ঠিকানা: ২০ বাবুপুরা (৩য় তলা), কাঁটাবন ঢাল, কাঁটাবন। ঢাকা ১২০৫। ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © ২০২৫ অভিমত

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • মন্তব্য
  • বিতর্ক
  • সাক্ষাৎকার
  • বিশ্লেষণ
  • কলাম
  • পরিক্রমা
  • রিভিউ

অভিমত
ঠিকানা: ২০ বাবুপুরা (৩য় তলা), কাঁটাবন ঢাল, কাঁটাবন। ঢাকা ১২০৫। ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © ২০২৫ অভিমত

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist